সম্পাদকীয়--

সম্পাদকীয়--

কবিতার ভাবনা বুঝি প্রকৃতির মাঝেই নিহিত থাকে--বস্তুত প্রকৃতিই সমস্ত জগতের প্রাণ ধারক। ঠিক তেমনি কবিতার অস্তিত্ব ও সর্বত্র বিরাজমান--কবিতা কোথায় নেই ? মনে-আনমনে কাগজে-কলমে ভাবনায় স্বপ্নে প্রেমে-বিরহে পাতা ঝরার শব্দে, নব কিশলয়ে--এমন কি তোমার আমার হিংস্রতায়, হত্যার রক্তাক্ত ছুরিকায়, বিচারে, সুখে-দুঃখে, ঘৃণায় কবিতা চাষ হয়ে যাচ্ছে কবিকুলের হাত ধরে। বলতে গেলে জীবনের সর্বত্র কবিতার বীজ ছড়িয়ে আছে। প্রকাশে অব্যক্ততায় প্রতি ব্যক্তির ভাবনায় কবিতা ধরা থাকে--তা কখনো প্রকাশিত হয় অথবা একান্ততা নিজস্বতায় তা বুকের গভীরে মনন পললে ফুটে ওঠে।

আবার আমরা ব্যক্ত প্রকাশের মানসিকতায় কলম তুলে নিই। কাগজে লিখে যাই। কবিতা নিজের মনের উদিত ভাবনাকে ধরে রাখি কলম বন্দে, ধরে রাখি কাগজের পৃষ্ঠায়।

নিজের ভাবনাগুলিকে স্বতঃস্ফূর্ত করতে কবিতা যেমন আমরা কাগজে-কলমে ধরে রাখি তেমনি আমরা চাই তার প্রচার প্রসার মাধ্যমও। আমার প্রিয় বা প্রিয়জনেরা আমার লেখা পড়ুক , আমার মনের ভাবইচ্ছা প্রকাশ জানতে পারুক এটাই আমাদের কাম্য। আমার লেখার উৎকর্ষতা বিচারে পাঠকবর্গর দান অপরিসীম। তাদের মাধ্যমে ভালো মন্দের বিচারে আমি পরিচিত হয়ে নিজেকে মর্জির পরিমার্জিত করতে পারি। কবি নামায় আখ্যায়িত হতে পারি। আমাদের কবিভাবনার সবাই গুণমুগ্ধ হোক--এ চাওয়া কবিমনের বড় তৃষ্ণা।

ব্যক্তিজীবনে আমরা কিন্তু সবাই কবি। কৈশোর যৌবন কালে কবি ভাবনা আমাদের মনকে আপ্লুত করে। কাগজ কলমের সংস্পর্শে এসে দু চার লাইন কবিতা আমরা সবাই লিখে ফেলি। ফুটপাতের জরাজীর্ণ মানুষগুলো কোন ক্ষণ- মুহূর্তে চাঁদের দিকে, সূর্যোদয় সূর্যাস্তের সৌন্দর্য দিকে দৃষ্টি রাখে। তারাও খানিক আচমক বিমুগ্ধ হয়ে ওঠে। আর তারপরই ধরতে পারে তাদের পেটের ক্ষুধার যন্ত্রণা কথা।

এ সব কবিতা কবিভাবনা নিয়েই আমাদের কবিতা পত্রিকা স্বরধ্বনি প্রতি দুমাসে প্রকাশিত হয়। এখানে ঘটে নবীন-প্রবীণ কবিদের সম্মেলন। তাঁদের ভাব ভাবনা স্বপ্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে ভরে ওঠে পত্রিকার পৃষ্ঠা। বেশকিছু স্বনামধন্য কবিকে স্বরধ্বনি পত্রিকায় পেয়ে আমরা সত্যিই গর্বিত।

সমস্ত প্রাচীন অর্বাচীন সব রকম কবি ভাবনার ভালো মন্দের বিচারক তো আপনারা। পাঠকবর্গের কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা আমাদের পত্রিকা পড়ুন, ভালো মন্দ নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে আমাদের পত্রিকা হয়ে উঠুক উন্নততর মানের। মনের এই কামনা নিয়ে আজের সম্পাদকীয় কলম এখানেই ইতি টানছি। ধন্যবাদ-- সম্পাদক, তাপসকিরণ রায়।


সহ-সম্পাদকের কলমে--

বিধাতার এক আশ্চর্য সৃষ্টি এই অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতি । সুন্দর আর সুচারু বিন্যাসে সজ্জিত এই পৃথিবী, যেখানে যেমনটি হওয়া উচিত ঠিক তেমনি ভাবেই সাজানো । প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে আছে জীবকুল। মানুষ এই প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সাজিয়ে নেয় প্রকৃতির অংশ হিসেবে । পান করে প্রকৃতির আশ্চর্য, অপরূপ নৈসর্গিক শোভা । জীবনের পরতে পরতে আত্মীকরণ ঘটে । তার উপলব্ধির পাল্লা বড়ো কম নয় ! আত্মোপলদ্ধির বহিঃপ্রকাশ হিসাবে লিখিত রূপে জন্ম নেয় গল্প কবিতা আরো কত কিছুই।

ঠিক যেমনটি হয়ে ছিল আদি কবি বাল্মীকির ক্ষেত্রে। মৈথুনরত ক্রৌঞ্চযুগলের পুরুষ ক্রৌঞ্চটিকে ব্যাধ কতৃক নিহত হতে দেখে ক্রুদ্ধ বাল্মীকির মুখ থেকে অভিশাপ বাণীর আকারে উচ্চারিত হয় সৃষ্টির প্রথম শ্লোক :

মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।

যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।[৯]।

--সাবিত্রী দাস, সহ-সম্পাদিকা।


Wednesday 7 April 2021

হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

 

হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা--


থেকে যেতে চাই


আমাকে না পারো

তো রেখো না কোথাও।


থেকে যেতে সকলেই চায়

উৎসবে উপহারে অথবা

বর্ষণে খরায়।

তেমনই থাকতে চায় অতলান্ত রায়।


সাধ তো সকলের থাকে 

সাধ্য হয়ে ওঠে না সবার।

থেকে যেতে হলে 

এইবেলা হাতে ছুরি নাও

এইবেলা শরীরের এ-ভাগ ও-ভাগ

কেটে নিয়ে যত্নে রাখো পাতায় পাতায়---

মনে রেখো শ্রীমান অতলান্ত রায়।


শুধু হৃদয় কেটো না

হৃদয় দিও না কোনো শর্তে-বাধ্যতায়---

জেনে রেখো অতলান্ত রায়

সেটুকু তোমার নয় একান্ত নিজের।


সকলেই থাকতে চায় সকলের মতো

দেওয়ালে বা অন্য কোনোখানে

ঝুলিয়ে দিও না।

কেউ, জেনো, মহাপ্রাণ নয়।

হৃদয়ে জাপটে রাখো

যকৃতে অথবা প্লীহায়

কিম্বা দুই নিভু নিভু চোখে


অন্যথায়

তুমি চ’লে গেলে

কার কী বা আসে যায়,

অত্যন্ত সাধারণ অতলান্ত রায়! 

-----------


অন্য মিছিল


মানুষ চলেছে কত, সারিবদ্ধ হয়ে 

মুখের সামনে ধরা আলোক বর্তিকা

হাতে ধরা দাহ্যদণ্ড শুধু

শূল, মুষল, মুদ্গর বা পট্টিশ-নারাচ নয়।

ওরা সুধীজন

শুদ্ধ বেশভুষা

বিগলিত তপ্ত দণ্ড থেকে তপ্তরস ঝ’রে পড়ে হাতে

তবু ওরা নির্বিকার নিরালম্ব চলে। 

দণ্ড জ্বলে যায়, শিখা উচু হয়ে ওঠে।

তবু ওরা শান্ত স্নিগ্ধ মিছিলে চলেছে।


‘স্থৈর্য’ ও ‘বরদাস্ত’ দুটি এক ক’রে গুলিয়ে ফেলেছে


হয়তো কোনো শীসার গুটিটি 

গেঁথে গ্যাছে দুরন্ত গতিতে বুকের ভেতর

হয়তো সব পুরুষ কুকুরেরা 

বসন্তেও পঞ্চম মাসে ভোগে 

লুট ক’রে চ’লে যায় তাদের ডেরায়

হয়তো কোনো দেশের সন্তান 

নিস্পন্দ শুয়ে আছে, কাঁটাতার পাশে।


নীরব মিছিলে কোনো তর্জন নেই

গর্জন-টর্জন নেই

জীবনের কোনো ঝুঁকি নেই এমন মিছিলে

ঝুঁকি নেই, তো দায়ও কারো নেই মোটে

শুধু আছে নীরবতা।

ঠাণ্ডা মরা মাছের মতো শীতল মিছিল।

--------


শ্যামাপ্রসাদ সরকারের দুটি কবিতা

শ্যামাপ্রসাদ  সরকারের দুটি কবিতা--  

রাই, শুনছ কি

.......................

জেগে আছ রাই !

অচেতন শয্যাপাশে তোমার

কখন থেকে একা দাঁড়িয়ে আছি!

তুমি তো স্বপ্নের মাঝে এখন

নিভিয়ে ফেলেছ অভীপ্সাগুলো

এখানেও সমানে শীত করে বলে

গায়ে টেনে নিয়েছ গরম চাদর।

রাই মনে পড়ে সেই কথাগুলো

অগুন্তিবার বলে যেতে তুমি

বোবা ছাদে কপট রোদেরা

এসে আল্পনা দিত তখন এমনিই।

তোমার হাঁটার পথেই আছে

কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো রক্তিম ফুলে।

ঝাউপাতাগুলো তোমার অদর্শনে

শুকিয়ে গিয়েছে ক্রমেই।

তুমি রাঁধ আজকাল?

বাজারেও যাও নাকি?

এত কিছু করে ফেলো অবলীলাভরে।

বড্ড হিসেবী তুমি এখন।

অপচয় করতেই ভুলে গেছ!

প্রতিটি সন্ধ্যা এসে চুপিচুপি বলে যায়

সেইসব গোপন কথাটা শুধুই

তুমি আর কবিতা বলনা মোটেও

তুমি বড় কঠিন হয়েছ নিজে নিজেই!

রাই তুমি, জান !

একলা তোমাকে জুড়েই

এখনো লিখতে পারি

অনর্গল কবিতার মত!

এলোমেলো অনেক কথারা

কার্ণিশে মেলে দিতে দিতে

এখনো জানলা জুড়ে রয়ে গেছে

তোমার নিঃশ্বাসে শ্বাস নেব বলে

গুছিয়ে রেখেছি শ্বাসবায়ু!

এখনো অসংখ্য কবিতা দিয়ে.

অভিমানের  রাতপোষাক

বানাতেও পারি! অজস্রবার, আজও।

*****************

অসময়ে মনে পড়ে গেল রাই!

............................................

আজ অসময়ে মনে পড়ে গেল রাই!

আকাশের মেঘেরা ঠিক তোমার মতন! 

তুমি কাশের বনে যেমন ছেলেমানুষ হয়ে ছুটতে

নীলাম্বরী মিলিয়ে যেত আদিগন্ত মাঠে

বৃক্ষবনে উতল হাওয়ায় তোমার এলোচুল

আর চরণের মঞ্জীর এক সাথে বাজত।


যে গাগরী নিয়ে জলের ধারে এসে

ভাসিয়ে দিতে সবটুকু তোমার অর্গল

রঙীন কাঁচের কঙ্কনগুলো ভাঙত ফেরার পথে

যেন আমার মুঠোয় ওদের টুকরো হওয়াই নিয়তি....

রাই এলোমেলো রোদ্দুরে তোমায় খুঁজতে গিয়ে

অনেকটা আয়ুষ্কালের অপচয় হয়ে গেল

সংসারের আঁচল বেঁধেছ পরিপাটী গ্রন্থিতে 

তবুও যেন  একটি মঞ্জীর তুলে রেখেছ অদম‍্য নৃত‍্যরঙ্গের অপেক্ষায়.....


রাই তোমাকে, সময়ে না পেয়ে  অসময়ে খুঁজতে বসা,

তোমার মেঘের মত একঢাল চুলে বিদ‍্যূতের জিহ্বা

লেহন করছে বর্ষণক্লান্ত পুরুষ আকাশের নগ্নগাত্র!

রাই, যমুনার জল শুকিয়ে গেছে অশ্রুকোটরে কবেই

কাঁখের সেই সাধের কলসটিও আজ ছিদ্রযুক্ত পাত্র!

 আকাশে একটুকরো কালো মেঘ আজ থাক শুধু

তোমার একটুকরো মনখারাপের শারদ উপহার হয়ে !!




Monday 5 April 2021

কাজল সেন

 

দেশ হারিয়ে যায়

কাজল সেন 


জীবনে যারা কখনও কোনো ট্রেন মিস করেনি

তাদের জন্য আমার খুব করুণা হয়

ট্রেন ধরতে না পারার জন্য যে বেদনা

গন্তব্যে পৌঁছতে না পারার জন্য যে আফশোস

তার কোনো স্বাদই পেল না সেই হতভাগ্য যাত্রীরা

 

আসলে কে আর কোথায় যায়

কোথায়ই বা পৌঁছায়

এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রাম

এক শহর থেকে অন্য শহর

 

আমিও কখনও ধরতে পারিনি

আমার গন্তব্যের ট্রেন

আর তাই যাওয়া হয়নি আমার দেশের বাড়ি

দেখা হয়নি আমার পৈত্রিক ভিটে

 

মা বলে ছিল সেই পৈত্রিক ভিটে আর কোথায়

নিজের দেশই বা আর আছে নাকি

সময় গড়ায় মানুষ বদলায়

তারপর এক দিন পৈত্রিক ভিটে আর দেশ

কোথায় যে হারায়

তৈমুর খানের তিনটি কবিতা

  

তৈমুর খানের তিনটি কবিতা 

নাম লেখাচ্ছি 

___________

নাম লেখাচ্ছি তোমার কাছে   ।

ও বিষাদ, আলো নেই আমার   ।

রাস্তা নেই  ।  বাতিল জীবন   ।

ভাঙা দুর্গের এককোণে পড়ে আছি   ।

স্বপ্নবারুদ পুড়ছে   আর  পোড়া গন্ধ 

নাচছে  এসে   ।

ঘুম নেই  ।   ঘুমের দেশে তীব্র  জাগরণ  ।

একটু একটু বেহুঁশ সময় ধুলো উড়িয়ে চলে যাচ্ছে  ।


ও বিষাদ , হাত ধরো  ।  তোমার ছায়ায় নিরবচ্ছিন্ন 

সিঁড়ি খুঁজে উঠতে চাইছি  ।  চাঁদ দেখব   ।  চাঁদের আলোর মুহূর্ত... 


        কম্পন 

      ________

কম্পন জেগে উঠল 

বৃহৎ নিসর্গ পথে কম্পনের পাখি উড়ে গেল 

বিপন্ন শুয়ে থাকার সময় 

                                   এক একবার রাত্রির মোহ 

                                                               কথা বলে 

জ্যোৎস্নার রহস্যপথে কথাদের যাতায়াত দেখি 


সামনে অনেক রাত্রি 

___________________

কারও কাছে আলো নেই 

তবুও আলো চাই 

তবুওঅভিমানে এঁকে দিই নদী 


দুইতীরে আমরা দুইজন 

গোধূলির রঙ দেখে ফিরি 

সামনে অনেক রাত্রি 

রাত্রিতে সবাই একাকী !


কবি কৌশিক গাঙ্গুলীর তিনটি কবিতা

 


কবি কৌশিক গাঙ্গুলীর তিনটি কবিতা--  


"পথচলা "


মিথ্যা মিথ্যা সুখ 

হেরে যাওয়ার অসুখ 

বিপন্ন সামাজিক পরিবেশ । 

সংঘর্ষ বিরতি 

আগুন খাওয়া পথচলা 

ডাল রুটি জীবন । 

অশান্তির সংসার 

দুর্ভাগ্যে জেরবার 

পালাবার নেই জায়গা । 

অপরাধবোধ হীন মানুষেরা 

শাস্তি পেলেও বোঝেনা 

একই চরিত্রে সঙ্গী জোটে দুবেলা । 

স্বপ্নরা হারিয়ে যায় 

রাজনীতির নোংরা মেখে 

সমর্থকরা করে উল্লাস । 

ভালবাসায় খিধে মেটেনা 

স্বার্থত্যাগের মূল্য বোঝেনা 

বোঝে শুধু চতুরতা মাখা অর্থনীতি । 

সত্য যখন বোকা 

বিবেককে খায় পোকা 

যন্ত্রনা থাকে বুকের ভিতরে । 

মিথ্যা মিথ্যা সুখ 

হেরে যাওয়ার অসুখ 

মরণ পারে শান্তি দিতে । 


"চৈতন্য "


নিঃসঙ্গতার পথ ধরে দুরন্ত 

গতিতে ছুটে চলে অশ্ব , 

পাতালের থমথমে পাথরের 

গায়ে আতঙ্কের ছবি আঁকে অন্ধকারের দূতেরা , 

যন্ত্রনার গর্জনে তীব্র উপহাস 

মাখানো  , দেবতারা ঘুমিয়ে থাকে , তারা জানে না ধ্বংস 

আসছে ভালবাসার পোশাক পরে , দেবদূতেরা কোন খবর রাখে না , তারা বিলাসে মত্ত । 

চেতনার আগুন জ্বলেনা , স্মৃতিমেদুর ইতিহাসে ফিকে হয়ে যায় সময়পট , উন্মাদের মতন নিজের কাছে অচেনা হয়ে যায় ঠিকানা , এদিকে পৃথিবীর রঙ ঘোলাটে , ছোট হয়ে যায় মনের কুঠুরীগুলো , মনুষ্যত্ব নিখোঁজ , রোবটেরা পরস্পরকে হত্যা করতে যুদ্ধে মত্ত হয় , হতাশ জীবন আত্মহত্যা করতে চায় , ওপরওলার হিসেব খাতায় ধার বাড়ে , অরণ্যে বৃষ্টির বদলে অ্যাসিড ঝরে পড়ে তবু ভুল বোঝে সমাজ , তাই নিঃসঙ্গতার পথ ধরে ছুটে চলে যায় অশ্ব আর পথের দুধারে পড়ে থাকে চেতনাহীন শবেরা , কাঁদার কেউ নেই এই মহামারীর সময় , দুঃসময়ে । 


 "একা তবু একা নই"


একা তবু একা নই

ফাঁকা তবু ফাঁকা নই

মাতৃহারা,পিতৃহারা

তবু পাশে আছেন তারা

তারা ভরা আকাশজুড়ে

আমার কথা বলা,কান্না।

ভালোবেসে যে ডাকে,

সেইতো স্বজন,সেই তো আপন

আর কবিতা প্রিয়তমা,

লেখার মধ্যে প্রেম খেলা করে

স্বপ্নরা উকি মারে, ভাবায়,হাসায়, 

বুকের মধ্যে জলে আগুন,

সমাজের বাঁকা মেরুদণ্ডটা

আমাকে হারায় আর

দুর্ভাগ্য অট্টহাসি হেসে চলে,

আমি শব্দ খুঁজি

সিনেমায়,নাটকে,ছবিতে।

একা তবু একা নই

এতো কিছু ঘিরে রাখে

চাঁদ, সূর্য,পাঠক-পাঠিকারা

হাসি,কান্না,স্বপ্ন, হতাশা,

তবুও আশা রাখি পৃথিবী

সুস্থ হবে, বিবেক, বোধ ফিরে আসবে আর

হারিয়ে যাবে শূন্যতা।

ফাঁকা তবু ফাঁকা নই

একা তবু একা নই...

কৌস্তুভ

  

বিকল্প / কৌস্তুভ 


সত্যি কি সেভাবে কিছু চমকায়?

যদি চমকায়, তবে আলো কই?

কোনোখান থেকে কই আসে?

বিদ্যুতের বিকল্প কোথায়?

কে হতে পারে সেই দিব্য পাখির চোখ 

যা দেখে পাগলগুলো আরো বেশি উৎফুল্ল হবে? 

পরে কি সিন্ধু থেকে জেগে উঠবে কিছু?

কি জানি!

এত যে পালক ঝরছে, চমক বাহার

পাতা আর পাখিরা তো জানতে চাইবেই -

আলো কই?

সেরকম আলো কিংবা

বিকল্প…


রবীন বসুর দুটি কবিতা

 

রবীন বসুর দুটি কবিতা--


ফিনিক্স নারী

চলে আসার সময় তুমি শুধু বলেছিলে, 'ভুলে যেও'

মাঠের নাড়ায় উঠেছিল ঢেউ

শুকনো গাছের মাথায় নিঃসঙ্গ কাক

আমি ইচ্ছে করেই চোখ সরিয়ে এইসব দেখছিলাম

আর একবারও তোমার মুখের দিকে না তাকিয়ে

চলে এসেছিলাম হনহনিয়ে।

সেটা কি আমার রাগ ছিল? অসভ্যতা? না, 

মনখারাপের খয়াটে ইস্তাহার!

তারপর, সারাজীবন 'ভুলে গেছি' 'ভুলে গেছি' ভেবে

ধুলোপায়ে হেঁটেছি কত! স্বপ্নে সাঁতারে অবশিষ্ট

নেই কিছু ; সাফ হয়ে গেছে স্মৃতি... অমলিন দিশা

ভেবে ভেবে নিজের ভিতরেই কাঁদি, ককিয়ে উঠি

দহনে দগ্ধ হই প্রতিদিন। তবু সেই ভস্মশেষ থেকে

পুনরায় জেগে ওঠে তোমার মুখ, ফিনিক্স নারী!

নতজানু আমি স্বীকার করছি, এই বেলাশেষেও

ভুলে যেতে পারিনি আজও...


অন্য কিছু কথা


বিষাদ লিখেছে মুখে অন্য কিছু কথা

গোপন আস্তিনে রাখা একমাত্র ছুরি

আমাদের চমকায় পূর্বাপর যথা

হিংসা আর নামাবলি পরস্পর জুড়ি।


যদিও সম্মুখ নেই অন্ধকারে পুড়ি

দিনরাত্রি ভয় নিয়ে খুঁজি নির্জনতা

পালিয়ে পালিয়ে ক্লান্ত পায়ে লাগে নুড়ি

এবার তো দম শেষ, বন্ধ কথকতা।


নত মাথা উঁচু হবে, শিরা টান টান

মেরুদণ্ড খাড়া রেখে দাঁড়ায় নির্ভয়

তবুও সম্মুখ আজ বড়ই নির্দয়

মানুষ লড়াই চায় সতত আপ্রাণ।


ক্ষীণ আলো সরু পথ চমকায় দিশা

অনন্ত কালের কাছে জেগে আছে নিশা।


হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

  হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা-- থেকে যেতে চাই আমাকে না পারো তো রেখো না কোথাও। থেকে যেতে সকলেই চায় উৎসবে উপহারে অথবা বর্ষণে খরায়। তে...