হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা--
আমাকে না পারো
তো রেখো না কোথাও।
থেকে যেতে সকলেই চায়
উৎসবে উপহারে অথবা
বর্ষণে খরায়।
তেমনই থাকতে চায় অতলান্ত রায়।
সাধ তো সকলের থাকে
সাধ্য হয়ে ওঠে না সবার।
থেকে যেতে হলে
এইবেলা হাতে ছুরি নাও
এইবেলা শরীরের এ-ভাগ ও-ভাগ
কেটে নিয়ে যত্নে রাখো পাতায় পাতায়---
মনে রেখো শ্রীমান অতলান্ত রায়।
শুধু হৃদয় কেটো না
হৃদয় দিও না কোনো শর্তে-বাধ্যতায়---
জেনে রেখো অতলান্ত রায়
সেটুকু তোমার নয় একান্ত নিজের।
সকলেই থাকতে চায় সকলের মতো
দেওয়ালে বা অন্য কোনোখানে
ঝুলিয়ে দিও না।
কেউ, জেনো, মহাপ্রাণ নয়।
হৃদয়ে জাপটে রাখো
যকৃতে অথবা প্লীহায়
কিম্বা দুই নিভু নিভু চোখে
অন্যথায়
তুমি চ’লে গেলে
কার কী বা আসে যায়,
অত্যন্ত সাধারণ অতলান্ত রায়!
-----------
অন্য মিছিল
মানুষ চলেছে কত, সারিবদ্ধ হয়ে
মুখের সামনে ধরা আলোক বর্তিকা
হাতে ধরা দাহ্যদণ্ড শুধু
শূল, মুষল, মুদ্গর বা পট্টিশ-নারাচ নয়।
ওরা সুধীজন
শুদ্ধ বেশভুষা
বিগলিত তপ্ত দণ্ড থেকে তপ্তরস ঝ’রে পড়ে হাতে
তবু ওরা নির্বিকার নিরালম্ব চলে।
দণ্ড জ্বলে যায়, শিখা উচু হয়ে ওঠে।
তবু ওরা শান্ত স্নিগ্ধ মিছিলে চলেছে।
‘স্থৈর্য’ ও ‘বরদাস্ত’ দুটি এক ক’রে গুলিয়ে ফেলেছে
হয়তো কোনো শীসার গুটিটি
গেঁথে গ্যাছে দুরন্ত গতিতে বুকের ভেতর
হয়তো সব পুরুষ কুকুরেরা
বসন্তেও পঞ্চম মাসে ভোগে
লুট ক’রে চ’লে যায় তাদের ডেরায়
হয়তো কোনো দেশের সন্তান
নিস্পন্দ শুয়ে আছে, কাঁটাতার পাশে।
নীরব মিছিলে কোনো তর্জন নেই
গর্জন-টর্জন নেই
জীবনের কোনো ঝুঁকি নেই এমন মিছিলে
ঝুঁকি নেই, তো দায়ও কারো নেই মোটে
শুধু আছে নীরবতা।
ঠাণ্ডা মরা মাছের মতো শীতল মিছিল।
--------